উদ্ভিদ বৈচিত্র্য
Plant Diversity
উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ
উদ্ভিদজগৎ
বিজ্ঞানী থিওফ্রাস্টাস উদ্ভিদের কান্ডের প্রকৃতি, বিস্তৃতি ও কাষ্ঠলতার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সমস্ত উদ্ভিদ জগতকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা- বৃক্ষ, গুল্ম, উপগুল্ম এবং বীরুৎ।
উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ
উদ্ভিদজগৎ
বিজ্ঞানী থিওফ্রাস্টাস উদ্ভিদের কান্ডের প্রকৃতি, বিস্তৃতি ও কাষ্ঠলতার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সমস্ত উদ্ভিদ জগতকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা- বৃক্ষ, গুল্ম, উপগুল্ম এবং বীরুৎ।
বৃক্ষ (Trees)
কাণ্ডবিশিষ্ট উচু কাষ্ঠল উদ্ভিদকে ট্রি বা বৃক্ষ বলে। এদের কাণ্ড মোটা, দীর্ঘ ও শক্ত। জাতীয় উদ্ভিদের কাণ্ড থেকে শাখা-প্রশাখা এবং পাতা বের হয়।এদের শেকড় মাটির বেশি গভীরে যায়। যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, বেল ইত্যাদি উদ্ভিদ। প্রতি বছর ভাস্কুলার টিস্যুতে একটি নতুন লেয়ার জাইলেম সষ্টির কারণে গাছের গুড়ির মধ্যে যে গোল দাগ পড়ে তাকেই বর্ষ বলয় বলে। এটি মূলত পত্র পতনশীল বৃক্ষ হয়ে থাকে।
গুল্ম (Shrubs)
যে সকল উদ্ভিদ কাষ্ঠল, সাধারণত কাণ্ডহীন এবং গোড়া হতে অধিক শাখা-প্রশাখা বের হয়ে ঝোপে পরিনত হয় তাদেরকে গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বলে। এই জাতীয় উদ্ভিদের শেকড় মাটির গভীরে যায় না। যেমন- জবা, রঙ্গন, গন্ধরাজ, গোলাপ, লেবু ইত্যাদি।
উপস্তুল (Undershurbs)
গুল্ম অপেক্ষা ছাটো আকারের কাষ্ঠল উদ্ভিদকে উপগুলা উদ্ভিদ বলে। যেমন- কাল্কাসুন্দা, আঁশশেওড়া ইত্যাদি।
বীরুৎ (Herbs)
নরম কান্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদকে বীরুৎ বা হার্ব উদ্ভিদ বলে। এই জাতীয় উদ্ভিদের শেকড় মাটির গভীরে যায় না। যেমন- ধান, গম, সরিষা, কচুরীপানা, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি বীরুৎ উদ্ভিদ। আয়ুষ্কাল অনুসারে বীরুৎউদ্ভিদকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা- বর্ষজীবী বা একবর্ষজীবী উদ্ভিদ, দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ, এবং বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ।
(১) বর্ষজীবী বা একবর্ষজীবী উদ্ভিদ: যে সকল উদ্ভিদ বছরে কোনো একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে জন্মে ওনির্দিষ্ট সময়ে একবার ফল দিয়ে গাছগুলো মারা যায় তবে এই ধরনের উদ্ভিদকে একবর্ষজীবী উদ্ভিদ বলে। যেমন- ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি।
(২) দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ: যে সকল উদ্ভিদ সাধারণত দু’বছর বেঁচে থাকে তাদেরকে দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ বলে। যেমন- মুলা, বাধাকপি ইত্যাদি।
(৩) বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ: যে সকল উদ্ভিদ দুই বছরের অধিক সময় বেঁচে থাকে তাদেরকে বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ বলে। যেমন- দুর্বা ঘাস, আদা, হলুদ ইত্যাদি।
উদ্ভিদ (Plants)
ফুল ও ফল ধারণ অনুযায়ী উদ্ভিদ জগতকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
উদ্ভিদ
অপুষ্পক উদ্ভিদ
সপুষ্পক উদ্ভিদ
নগ্নবীজী উদ্ভিদ
আবৃতবীজী উদ্ভিদ
অপুষ্পক উদ্ভিদ
যে সকল উদ্ভিদে কখনও ফুল ও ফল হয় না, তাদের অপুষ্পক উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন- ক্লোরেলা, নস্টক, মস, ফার্ন প্রভৃতি। অধিকাংশ উদ্ভিদের দেহকে মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায় না। এরা সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ। যে সকল উদ্ভিদ নিচের খাদ্য নিজেই প্রস্তুত করতে পারে, তাকে স্বভোজী বা অটোফাইট বলা হয়। ছত্রাক ছাড়া পৃথিবীর অধিকাংশ উদ্ভিদ অটোফাইট।।
সপুষ্পক উদ্ভিদ
যে সকল উদ্ভিদে ফুল হয় এদের সপুষ্পক উদ্ভিদ বলে। যেমন- আম, জাম, ধান, মরিচ, পেয়াজ, শিমুল, অর্কিড প্রভৃতি।
সপুষ্পক উদ্ভিদের দেহ সুস্পষ্টভাবে মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত। এদের দেহে অত্যন্ত উন্নত পরিবহন কলা উপস্থিত। আবার সকল সপুষ্পক উদ্ভিদের ফল হয় না। সপুষ্পক উদ্ভিদকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- নগ্নবীজী উদ্ভিদ এবং আবৃতবীজী উদ্ভিদ।
নগ্নবীজী উদ্ভিদ (Gymnosperm)
যে সকল সপুষ্পক উদ্ভিদের বীজ হয় কিন্তু ফল হয় না তাদেরকে নগ্নবীজী উদ্ভিদ বলে। এদের ফুলের ডিম্বাশয় (গর্ভাশয়) না থাকায় ডিম্বক নগ্ন থাকে। এসব ডিম্বক পরিণত হয়ে বীজ উৎপন্ন করে। যেমনসাইকাস (Cycus), পাইনাস (Pinus), নিটাম (Gnetum) ইত্যাদি।
আবৃতবীজী উদ্ভিদ (Angiosperms)
যে সকল সপুষ্পক উদ্ভিদের ফল ও বীজ হয়, তাদেরকে আবৃতবীজী উদ্ভিদ বলে। এসব উদ্ভিদের ফুলে ডিম্বাশয় থাকে। ডিম্বকগুলো ডিম্বাশয়ের ভিতরে সজ্জিত থাকে। নিষেকের পর ডিম্বক বীজে ও ডিম্বাশয়টি ফলে পরিণত হয়। এ কারণে বীজগুলো ফলের মধ্যে আবৃত অবস্থায় থাকে। আবৃতজীবী উদ্ভিদ দুই প্রকার যথা- একবীজপত্রী উদ্ভিদ এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ।
একবীজপত্রী উদ্ভিদ: যে সকল উদ্ভিদের বীজে একটি মাত্র বীজপত্র থাকে তাদের একবীজপত্রী বলে। যেমন- ধান, গম, ইক্ষু, তাল, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, ভুট্টা ইত্যাদি
দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ: যে সব উদ্ভিদের বীজে দুটি বীজপত্র থাকে তাদের দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে। যেমন- কাঁঠাল, লিচু, ছোলা, শিম, মটর, মেহগনি, সুন্দরী ইত্যাদি।
উদ্ভিদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য
একটি আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদকে মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল প্রভৃতি অংশে বিভক্ত করা যায়। উদ্ভিদের যে অংশগুলো মাটির উপরে থাকে, তাদের একত্রে বিটপ বলে। বিটপে কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল থাকে।
পরিবর্তিত কাণ্ড
প্রধানমূলের সাথে লাগান মাটির উপরের উদ্ভিদের অংশটি কাণ্ড। কাণ্ড পাতা, ফুল ও ফল ধারণ করে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে সাধার কাজ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য কাণ্ডের আকৃতিগত ও অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটে। এ ধরনের পরিবর্তনকে কাণ্ডের রূপান্তর বলে। অবস্থান অনুযায়ী এদের তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক) ভূ-নিম্নস্থ পরিবর্তিত কাণ্ড, খ) অর্ধ-বায়বীয় পরিবর্তিত কাণ্ড এবং গ) বায়বীয় পরিবর্তিত কাণ্ড।
ক) ভূ-নিম্নস্থ পরিবর্তিত কাণ্ড: সাধারণত উদ্ভিদের কাণ্ড মাটির উপরে থাকে। কিন্তু যে সমস্ত কাণ্ড মাটির নিচে থাকে, এদের ভূ-নিম্নস্থ পরিবর্তিত কাণ্ড বলে। যেমন- আদা, হলুদ, সটি, গোলআলু, ওলকচু, পেয়াজ, রসুন, লিলি, টিউলিপ প্রভৃতি।
খ) অর্ধ-বায়বীয় পরিবর্তিত কাণ্ড: কোনো কোনো কাণ্ডের কিছু অংশ মাটিতে এবং কিছু অংশ বায়ুতে থাকে। এদের অর্ধ-বায়বীয় পরিবর্তিত কাণ্ড বলে। যেমন- থানকুনি, দুর্বাঘাস, আমরুলী, কচু, কচুরিপানা, টোপাপানা, পুদিনা, চন্দ্রমল্লিকা, বাঁশ প্রভৃতি।
কচুরীপানা: কচুরীপানাসহ অধিকাংশ জলজ উদ্ভিদের। কাণ্ড ফাঁপা। এদের কাণ্ডে অনেক বায়ু কুঠুরী থাকে। তাই এরা সহজে পানিতে ভাসে। উনিশ শতকের শেষার্ধে জনৈক পর্যটক কচুরিপানার অর্কিডসদৃশ ফুলে মুগ্ধ হয়ে ব্রাজিল থেকে এ উদ্ভিদ বাংলাদেশে আনেন।
গ) বায়বীয় পরিবর্তিত কাণ্ড: কতগুলো গাছের কাণ্ড বা কাণ্ডের অংশবিশেষ কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য পরিবর্তিত হয়ে এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে এদের কাণ্ড বলে মনে হয় না। এদেরকে বায়বীয় পরিবর্তিত কাণ্ড বলে। যেমন- ফণিমনসা, শতমূলী, বেল, ময়না কাটা, মেহেদী, হাড়জোড়া, ঝুমকোলতা, বুলবিল প্রভৃতি। ফণিমনসার কাণ্ড পরিবর্তিত হয়ে পাতার মতো চ্যাপ্টা ও সবুজ হয়।
পরিবর্তিত পাতা
কিছু কিছু উদ্ভিদের কতগুলো জৈবিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য পরিবর্তিত হয়। যেমন-
ক) পতঙ্গ ফাঁদ: কলসি উদ্ভিদ, ঝাঁঝি, সূর্যশিশির প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা আমিষ খাদ্যের জন্য পতঙ্গ ধরার ফাদ হিসেবে কলসি, থলি প্রভৃতিতে বিবর্তিত হয়। এ ধরনের উদ্ভিদকে পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বলে।
খ) প্রজনন: পাথরকুচির পাতার কিনারায় কুঁড়ি গজায়। ধীরে ধীরে এসব কুঁড়ি থেকে নিচের দিকে গুচ্ছমূলও গজায়।
গ) কণ্টকপত্র: পাতা কখনও কাটায় পরিণত হয়। যেমন- লেবু।
ঘ) সঞ্চয় খাদ্য: পেঁয়াজ, রসুন বা ঘৃতকুমারী পাতা পুরু ও রসালো হয়। এসব পাতায় খাদ্য জমা থাকে।
পরিবর্তিত মূল
ক) প্রধান মূলের রূপান্তর
মূল কখনো বিশেষ কার্য সম্পাদনের জন্য রূপান্তরিত হতে পারে। যথা-
* মূলাকৃতি মূল : মূলা।
* গাজরাকৃতি মূল : গাজর।
* শালগমাকৃতি মূল : শালগম।
* কান্দাকৃতি মূল : সন্ধ্যামালতি।
খ) অস্থানিক মূলের রূপান্তর
* খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য রূপান্তর : মিষ্টি আলুর কন্দাল মূল, শতমূলী ও ডালিয়ার গুচ্ছিত কন্দ মূল এবং করলার মালাকৃতির মূল ইত্যাদি।
* যান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষার্থে রূপান্তর : বটের স্তম্ভমূল, কেয়ার ঠেস মূল, পানের আরোহী মূল।
* শরীরবৃত্তীয় কার্য সাধনের জন্য রূপান্তর : রাস্নার পরাশ্রয়ী বায়বীয় মূল, স্বর্ণলতার শোষক মূল, সুন্দরী ও গরান গাছের শ্বাসমূল, মিষ্টি আলুর জনন মূল।
উদ্ভিদে বংশ বৃদ্ধি
উদ্ভিদেরর প্রজনন (Reproduction of Plants)
একটি গাছের তারই অনুরূপ তারই অনুরূপ আর একটি গাছ জন্ম দেয়ার এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রজনন। উদ্ভিদের প্রজনন দুই প্রকার। যথা: অযৌন প্রজনন এবং যৌন প্রজনন।
উদ্ভিদের প্রজনন দুই প্রকার। যথা: অযৌন প্রজনন এবং যৌন প্রজনন।
ক) অযৌন প্রজনন
যে জনন প্রক্রিয়ায় দুটো ভিন্নধর্মী জনন কোষের মিলন ছাড়াই সম্পন্ন হয় তাই অযৌন প্রজনন। অযৌন প্রধানত দুই প্রকার। যথা- স্পোর উৎপাদন এবং অঙ্গজ প্রজনন।
(১) স্পোর উৎপাদন: নিম্ন শ্রেণীর অপুষ্পক উদ্ভিদ যেমন- শৈবাল, ছত্রাক, মস এবং ফার্ন স্পোর বা অণবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ রক্ষা করে।
(২) অঙ্গজ প্রজনন: কোনো ধরনের অযৌন জনন কোষ সৃষ্টি না করে দেহের অংশ খণ্ডিত হয়ে বা কোনো অঙ্গ রূপান্তরিত হয়ে যে জনন ঘটে তাকে অঙ্গজ জনন বলে। অঙ্গজ প্রজননকে স্বাভাবিক ও কৃত্রিম এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন: বিভিন্ন পদ্ধতিতে স্বাভাবিক নিয়মেই এ ধরনের অঙ্গজ জনন দেখা যায়। যথা
• দেহের খণ্ডায়ন : Spirogyra, Mucor ইত্যাদি।
• মূলের মাধ্যমে : মিষ্টি আলু, ডালিয়া, কাঁকরোল, পটল ইত্যাদি।
• রূপান্তরিত কাণ্ডের মাধ্যমে : আলু, আদা, হলুদ, সটি, পিঁয়াজ, রসুন, কচু, পুদিনা, কচুরি পানা, কলা, আনারস, চুপড়ি আলু।
• পাতার মাধ্যমে : পাথরকুচি।
কত্রিম অঙ্গজ প্রজনন: কৃত্রিম উপায়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন বলে। কলম, কাটিং, লেয়ারিং, বাডিং ইত্যাদি পদ্ধতিতে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন ঘটানো যায়।
১) কলম (Grafting): কলম করার জন্য প্রথমে একটি সুস্থ গাছের কচি ও সতেজ শাখা নির্বাচন করা হয়। উপযুক্ত স্থানে বাকল সামান্য কেটে নিতে হয়। এবার ঐ ক্ষতস্থানটি মাটি ও গোবর মিশিয়ে ভালোভাবে আবৃত করে দিতে হয়। এবার সেলোফেন টেপ বা পলিথিন দিয়ে মুড়ে দিতে হবে যাতে পানি লেগে মাটি খসে না পড়ে। এভাবে কিছুদিন রেখে দিলে এ স্থানে মূল গজাবে। এর পরে মূলসহ শাখার এ অংশটি মাতউদ্ভিদ থেকে কেটে নিয়ে মাটিতে রোপন করে দিলে নতুন একটি উদ্ভিদ হিসেবে গড়ে উঠবে।
২) কাটিং: গোলাপের একটি ডাল নিয়ে ভেজা মাটিতে পুঁতে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই তা থেকে নতুন কুড়ি উৎপন্ন হয়। এ সব কুড়ি বড় হয়ে একটি নতুন গোলাপ গাছ উৎপন্ন করে।
কোন গাছের শিকড়, ডাল বা পাতা থেকে যে নতুন চারা গাছ গজায়, তাকে দাবা কলম বলে।
খ) যৌন প্রজনন
ফুল এবং ফল থেকে বীজ হয়। বীজ থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়। এভাবে একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। তাই ফুল উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনন অঙ্গ।
ক) অযৌন প্রজনন
যে জনন প্রক্রিয়ায় দুটো ভিন্নধর্মী জনন কোষের মিলন ছাড়াই সম্পন্ন হয় তাই অযৌন প্রজনন। অযৌন প্রধানত দুই প্রকার। যথা- স্পোর উৎপাদন এবং অঙ্গজ প্রজনন।
(১) স্পোর উৎপাদন: নিম্ন শ্রেণীর অপুষ্পক উদ্ভিদ যেমন- শৈবাল, ছত্রাক, মস এবং ফার্ন স্পোর বা অণবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ রক্ষা করে।
(২) অঙ্গজ প্রজনন: কোনো ধরনের অযৌন জনন কোষ সৃষ্টি না করে দেহের অংশ খণ্ডিত হয়ে বা কোনো অঙ্গ রূপান্তরিত হয়ে যে জনন ঘটে তাকে অঙ্গজ জনন বলে। অঙ্গজ প্রজননকে স্বাভাবিক ও কৃত্রিম এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন: বিভিন্ন পদ্ধতিতে স্বাভাবিক নিয়মেই এ ধরনের অঙ্গজ জনন দেখা যায়। যথা
• দেহের খণ্ডায়ন : Spirogyra, Mucor ইত্যাদি।
• মূলের মাধ্যমে : মিষ্টি আলু, ডালিয়া, কাঁকরোল, পটল ইত্যাদি।
• রূপান্তরিত কাণ্ডের মাধ্যমে : আলু, আদা, হলুদ, সটি, পিঁয়াজ, রসুন, কচু, পুদিনা, কচুরি পানা, কলা, আনারস, চুপড়ি আলু।
• পাতার মাধ্যমে : পাথরকুচি।
কত্রিম অঙ্গজ প্রজনন: কৃত্রিম উপায়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন বলে। কলম, কাটিং, লেয়ারিং, বাডিং ইত্যাদি পদ্ধতিতে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন ঘটানো যায়।
১) কলম (Grafting): কলম করার জন্য প্রথমে একটি সুস্থ গাছের কচি ও সতেজ শাখা নির্বাচন করা হয়। উপযুক্ত স্থানে বাকল সামান্য কেটে নিতে হয়। এবার ঐ ক্ষতস্থানটি মাটি ও গোবর মিশিয়ে ভালোভাবে আবৃত করে দিতে হয়। এবার সেলোফেন টেপ বা পলিথিন দিয়ে মুড়ে দিতে হবে যাতে পানি লেগে মাটি খসে না পড়ে। এভাবে কিছুদিন রেখে দিলে এ স্থানে মূল গজাবে। এর পরে মূলসহ শাখার এ অংশটি মাতউদ্ভিদ থেকে কেটে নিয়ে মাটিতে রোপন করে দিলে নতুন একটি উদ্ভিদ হিসেবে গড়ে উঠবে।
২) কাটিং: গোলাপের একটি ডাল নিয়ে ভেজা মাটিতে পুঁতে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই তা থেকে নতুন কুড়ি উৎপন্ন হয়। এ সব কুড়ি বড় হয়ে একটি নতুন গোলাপ গাছ উৎপন্ন করে।
কোন গাছের শিকড়, ডাল বা পাতা থেকে যে নতুন চারা গাছ গজায়, তাকে দাবা কলম বলে।
খ) যৌন প্রজনন
ফুল এবং ফল থেকে বীজ হয়। বীজ থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়। এভাবে একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। তাই ফুল উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনন অঙ্গ।
খ) যৌন প্রজনন
ফুল এবং ফল থেকে বীজ হয়। বীজ থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়। এভাবে একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। তাই ফুল উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনন অঙ্গ।
ফটোপিরিওডিজম (Photoperiodism)
উদ্ভিদের ফুল ধারণের উপর দিবালোকের দৈর্ঘ্যের প্রভাবকে ফটোপিরিওডিজম বলে। ফটোপিরিওডিজম এর উপর ভিত্তি উদ্ভিদকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) ছোট দিনের উদ্ভিদ: দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হলে ছোট দিনের উদ্ভিদে ফুল ফোটে। যেমন- সয়াবিন, আলু, ইক্ষু, কসমস, শিম, ডালিয়া, তামাক, চন্দ্রমল্লিকা, রোপা আমন, পাট। এদের দীর্ঘরাত্রির উদ্ভিদও বলা হয়।
২) বড়দিনের উদ্ভিদ: দিনের দৈর্ঘ্য বড় হলে এ জাতীয় ফুল ফোটে। যেমন- ঝিঙ্গা, লেটুস, পালংশাক, আফিম, যব প্রভৃতি। এদের ছোট রাত্রির উদ্ভিদও বলা হয়।
পরাগায়ণ (Pollination)
ফুলের প্রতিটি উর্বর পুংকেশরের মাথায় একটি পরাগধানী থাকে। পরাগধানী হতে পরাগরেণু স্থানান্তরিত হয়ে ফুলের গর্ভমুণ্ডে পতিত হওয়াকে পরাগায়ণ বলে। পরাগায়ণ দুই প্রকার। যথা- স্বপরাগায়ণ এবং পরপরাগায়ণ।
(ক) স্বপরাগায়ণ (Self Pollination): পরাগধানী হতে পরাগরেণু স্থানান্তরিত হয়ে একই ফুলের গর্ভমুণ্ডে বা একই গাছের অন্য একটি ফুলের গর্ভমুণ্ডে পতিত হওয়াকে স্ব- পরাগায়ণ বলে। যেমন- শিম, টমেটো, কানশিরা, তুলা প্রভৃতি।
(খ) পরপরাগায়ণ (Cross - Pollination): পরাগধানী হতে পরাগরেণু স্থানান্তরিত হয়ে একই প্রজাতির অন্য একটি গাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডে পতিত হওয়াকে পর-পরাগায়ন বলে। অধিকাংশ উদ্ভিদে পরপরাগায়ন হয়। পরপরাগায়ণ সাধারণত বায়ু, কীটপতঙ্গ, প্রাণী এবং পানির মাধ্যমে ঘটে থাকে। যেমন-
১) বায়ু পরাগায়ণ (Anemophily): যেসব ফুলের পরাগায়ণ বায়ুর মাধ্যমে হয়ে থাকে, তাদের বায়ু পরাগী ফুল বলে। যেমন- ধান, গম, ভুট্টা, ইক্ষু ইত্যাদি।
২) পতঙ্গ পরাগায়ণ (Entomophily): সূর্যমুখী, জুই, সরিষা, গোলাপ, পদ্ম, শালুক, জবা কুমড়া প্রভৃতি ফুলে পতঙ্গ পরাগায়ণ হয়। কালো পিঁপড়া ডুমুরের পুংরেণুর সাথে স্ত্রী রেণুর সংযোগ ঘটায়। ফুলের বর্ণ, গন্ধ ও মধুর লোভে পতঙ্গ যখন ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় তখন পরাগরেণু পতঙ্গের মাধ্যমে এক ফুল থেকে অন্য ফলে স্থানান্তরিত হয়। রাতে ফোটা পতঙ্গপরাগী ফুল তীব্র গন্ধযুক্ত এবং সাদা পাপড়ি বিশিষ্ট হয়।
৩) প্রাণী পরাগায়ণ (Omithophily): যে সকল ফুলের পরাগায়ণ পশু পাখির (কাঠবিড়াল, বাদুর, পাখি) মাধ্যমে সংঘটিত হয় সে সকল ফুলকে প্রাণীপরাগী ফুল বলে। যেমন- কদম, কলা, কচু, শিমুল, পলাশ প্রভৃতি।
৪) পানি পরাগায়ণ: যে সব ফুলের পরাগয়ণ পানির মাধ্যমে ঘটে, সে সব ফুলকে পানি পরাগী ফুল বলে। যথা- পাতা শ্যাওলা, কাঁটা শ্যাওলা প্রভৃতি।
ফল (Fruit)
ফলের উৎস ও প্রকৃতি অনুসারে ফলকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা- সরল ফল, গুচ্ছ ফল ও যৌগিক ফল। সাধারণত ফলের অংশ ৩ অংশ থাকে। যথা- বহিঃত্বক (Exocarp), মধ্যত্বক (Mesocarp) এবং অন্তঃত্বক (Endocarp)।
সরল ফল: যে ফল একটি ফুলের একটি মাত্র গর্ভপত্র বা একাধিক যুক্ত গর্ভপত্রবিশিষ্ট ডিম্বাশয় থেকে সৃষ্টি হয়, তাকে সরল ফল বলে। যেমন- আম, জাম, কলা, মটর, শিম, তেঁড়স, সরিষা ইত্যাদি।
গুচ্ছফল: যে ফল একটি ফুলের একাধিক মুক্ত গর্ভপত্রবিশিষ্ট ডিম্বাশয় হতে উৎপন্ন হয় তাকে গুচ্ছ ফল বলে। যেমন- আতা, পদ্ম, চম্পা, নয়নতারা, আকন্দ, আতা, শরীফা প্রভৃতি।
যৌগিক ফল: যখন একটি পুষ্পমঞ্জুরির সব ফুল মিলে একটি ফলে পরিণত হয়, তখন তাকে যৌগিক ফল বলে। যৌগিক ফলের ভিতরে অসংখ্য বীজ থাকে। যেমন- আনারস, কাঁঠাল, ডুমুর ইত্যাদি।
বীজের বিস্তরণ
মাতৃ উদ্ভিদ হতে ফল ও বীজ বিভিন্ন উপায়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়াকে বীজের বিস্তরণ বলা হয়। যেমন- বটের বীজের বিস্তার ঘটে পাখির সাহায্যে।
পেয়ারা
কলা
পেঁপে
জামরুল
অঙ্কুরোদগম (Germination)
বীজ থেকে শিশু উদ্ভিদ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে অঙ্কুরোদগম বলে। যথাযথভাবে অঙ্কুরোদগম হওয়ার জন্য পানি, তাপ ও অক্সিজেন প্রয়োজন। বীজের অঙ্কুরোদগম প্রধানত তিন প্রকার। যথা- মৃৎগত, মৃৎভেদী এবং জরায়ুজ। সংক্ষেপে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ক) মৃৎগত অঙ্কুরোদগম: যে অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ায় বীজ পত্রাদি কাণ্ডের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে মুকুল মাটির উপরে উঠে আসে কিন্তু বীজপত্র মাটির ভিতরে থেকে যায় তখন তাকে মৃগত অঙ্কুরোদগম বলে। যেমন- নাম ছোলা, মটরশুটি, ধান, গম, ছোলা ইত্যাদি উদ্ভিদে এই ধরনের অঙ্কুরোদগম ঘটে।
খ) মভেদী অঙ্কুরোদগম: যে অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ায় বীজ পত্রাদি কাণ্ডের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে বীজপত্রসহ ভ্রুণ মুকুল মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসে তাকে মৃৎভেদী অঙ্কুরোদগম বা এপিজিয়াল জারমিনেশন বলে। যেমন- তেঁতুল, লাউ, পেঁয়াজ, কুমড়া, শিম, রেডী ইত্যাদি।
গ) জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম: লোনা পানির অধিকাংশ উদ্ভিদে যে বিশেষ অঙ্কুরোদগম দেখা যায়, তাকে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে। যেমন- কেওড়া, গরান, সুন্দরী ইত্যাদি।
অঙ্কুরোদগম (Germination)
বীজ থেকে শিশু উদ্ভিদ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে অঙ্কুরোদগম বলে। যথাযথভাবে অঙ্কুরোদগম হওয়ার জন্য পানি, তাপ ও অক্সিজেন প্রয়োজন। বীজের অঙ্কুরোদগম প্রধানত তিন প্রকার। যথা- মৃৎগত, মৃৎভেদী এবং জরায়ুজ। সংক্ষেপে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ক) মৃৎগত অঙ্কুরোদগম: যে অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ায় বীজ পত্রাদি কাণ্ডের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে মুকুল মাটির উপরে উঠে আসে কিন্তু বীজপত্র মাটির ভিতরে থেকে যায় তখন তাকে মৃগত অঙ্কুরোদগম বলে। যেমন- নাম ছোলা, মটরশুটি, ধান, গম, ছোলা ইত্যাদি উদ্ভিদে এই ধরনের অঙ্কুরোদগম ঘটে।
খ) মভেদী অঙ্কুরোদগম: যে অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ায় বীজ পত্রাদি কাণ্ডের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে বীজপত্রসহ ভ্রুণ মুকুল মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসে তাকে মৃৎভেদী অঙ্কুরোদগম বা এপিজিয়াল জারমিনেশন বলে। যেমন- তেঁতুল, লাউ, পেঁয়াজ, কুমড়া, শিম, রেডী ইত্যাদি।
গ) জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম: লোনা পানির অধিকাংশ উদ্ভিদে যে বিশেষ অঙ্কুরোদগম দেখা যায়, তাকে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে। যেমন- কেওড়া, গরান, সুন্দরী ইত্যাদি।
উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলি
ব্যাপন
সব পদার্থ কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু নিয়ে তৈরি। এ অণুগুলো সবসময় গতিশীল বা চলমান অবস্থায় থাকে। তরল বা গ্যাসের ক্ষেত্রে অণুগুলোর চলন দ্রুত হয় এবং বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘঘনত্বের দিকে অণুগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না অণুগুলোর ঘনত্বের সমান হয়। অণুগুলোর এরূপ চলন প্রক্রিয়াকে বলে ব্যাপন। অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হওয়া মাত্রই পদার্থের ব্যাপন বন্ধ হয়ে যায়।
অভিস্রবণ (Osmosis)
যে প্রক্রিয়ায় একটি বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লীর মধ্য দিয়ে হাল্কা ঘনত্বের দ্রবণ হতে পানি (দ্রাবক) অধিক ঘন দ্রবণের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে অভিস্রবণ (Osmosis) বলে। দুটো দ্রবণের ঘনত্ব সমান না হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। পানিতে কিচমিচ ডুবিয়ে রাখলে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যে ফুলে উঠে।
প্রস্বেদন (Transpiration)
উদ্ভিদের পাতা ও অন্যান্য বায়বীয় অঙ্গ হতে জলীয় বাষ্প বের হয়ে যাবার প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রস্বেদন। বায়বীয় অংশ থেকে পানি ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের হয়ে যায়। প্রস্বেদনের জন্য সূর্যের প্রখর উত্তাপেও গাছের পাতা গরম হয় না। শীত বা গ্রীষ্মের পূর্বে প্রস্বেদন কমাতে গাছের পাতা ঝড়ে যায়। কলার চারা লাগানোর সময় প্রস্বেদন রোধ করার জন্য পাতা কেটে ফেলা হয়। প্রস্বেদন তিন প্রকার। যথা-
ক) পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন (৯০-৯৫%)
খ) কিউটিকুলার প্রস্বেদন
গ) লেন্টিকুলার প্রস্বেদন: উদ্ভিদের পরিণত কাণ্ডে সেকেন্ডারি বৃদ্ধির ফলে স্থানে স্থানে ফেটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রের সৃষ্টি হয়। এ ছিদ্রকে বলে লেন্টিসেল। লেন্টিসেলের মধ্যে দিয়ে প্রস্বেদনকে বলা হয় লেন্টিকুলার প্রস্বেদন।
প্রস্বেদনের ফলে খাদ্য তৈরির জন্য পাতায় অবিরাম পানি সরবরাহ সম্ভব হয়। প্রস্বেদনের ফলে জাইলেম বাহিকায় যে টান সৃষ্টি হয়, তা মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণে সাহায্য করে।
পানি ও খনিজ লবণের পরিবহন
উদ্ভিদের মূলরোম দিয়ে পানি অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় এবং পানিতে দ্রবীভত খনিজ লবণ নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় শোষণ পদ্ধতিতে শোষিত হয়ে জাইলেম টিস্যুতে পৌঁছায়। উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যু দুই ধরনের। যথা- জাইলেম ও ফ্লোয়েম। জাইলেমেরে মাধ্যমে মূল দ্বারা শোষিত পানি পাতায় যায় এবং ফ্লোয়েমের দ্বারা পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য সারাদেহে পরিবাহিত হয়।
ব্যাপন
সব পদার্থ কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু নিয়ে তৈরি। এ অণুগুলো সবসময় গতিশীল বা চলমান অবস্থায় থাকে। তরল বা গ্যাসের ক্ষেত্রে অণুগুলোর চলন দ্রুত হয় এবং বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘঘনত্বের দিকে অণুগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না অণুগুলোর ঘনত্বের সমান হয়। অণুগুলোর এরূপ চলন প্রক্রিয়াকে বলে ব্যাপন। অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হওয়া মাত্রই পদার্থের ব্যাপন বন্ধ হয়ে যায়।
অভিস্রবণ (Osmosis)
যে প্রক্রিয়ায় একটি বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লীর মধ্য দিয়ে হাল্কা ঘনত্বের দ্রবণ হতে পানি (দ্রাবক) অধিক ঘন দ্রবণের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে অভিস্রবণ (Osmosis) বলে। দুটো দ্রবণের ঘনত্ব সমান না হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। পানিতে কিচমিচ ডুবিয়ে রাখলে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যে ফুলে উঠে।
প্রস্বেদন (Transpiration)
উদ্ভিদের পাতা ও অন্যান্য বায়বীয় অঙ্গ হতে জলীয় বাষ্প বের হয়ে যাবার প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রস্বেদন। বায়বীয় অংশ থেকে পানি ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের হয়ে যায়। প্রস্বেদনের জন্য সূর্যের প্রখর উত্তাপেও গাছের পাতা গরম হয় না। শীত বা গ্রীষ্মের পূর্বে প্রস্বেদন কমাতে গাছের পাতা ঝড়ে যায়। কলার চারা লাগানোর সময় প্রস্বেদন রোধ করার জন্য পাতা কেটে ফেলা হয়। প্রস্বেদন তিন প্রকার। যথা-
ক) পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন (৯০-৯৫%)
খ) কিউটিকুলার প্রস্বেদন
গ) লেন্টিকুলার প্রস্বেদন: উদ্ভিদের পরিণত কাণ্ডে সেকেন্ডারি বৃদ্ধির ফলে স্থানে স্থানে ফেটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রের সৃষ্টি হয়। এ ছিদ্রকে বলে লেন্টিসেল। লেন্টিসেলের মধ্যে দিয়ে প্রস্বেদনকে বলা হয় লেন্টিকুলার প্রস্বেদন।
প্রস্বেদনের ফলে খাদ্য তৈরির জন্য পাতায় অবিরাম পানি সরবরাহ সম্ভব হয়। প্রস্বেদনের ফলে জাইলেম বাহিকায় যে টান সৃষ্টি হয়, তা মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণে সাহায্য করে।
পানি ও খনিজ লবণের পরিবহন
উদ্ভিদের মূলরোম দিয়ে পানি অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় এবং পানিতে দ্রবীভত খনিজ লবণ নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় শোষণ পদ্ধতিতে শোষিত হয়ে জাইলেম টিস্যুতে পৌঁছায়। উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যু দুই ধরনের। যথা- জাইলেম ও ফ্লোয়েম। জাইলেমেরে মাধ্যমে মূল দ্বারা শোষিত পানি পাতায় যায় এবং ফ্লোয়েমের দ্বারা পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য সারাদেহে পরিবাহিত হয়।
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস হলো আলো। লাল আলোতে সবচেয়ে বেশি সালোকসংশ্লেষণ হয়। সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নির্গত অক্সিজেনের উৎস পানি। উদ্ভিদের সবুজ অংশে বিশেষ করে পাতায়, কচি সবুজ কান্ডে এবং সবুজ বীজপত্রে সালোক সংশ্লেষণ হয়। কিন্তু উদ্ভিদের মূলে সালোক সংশ্লেষণ হয় না। সালোক সংশ্লেষণের জন্য সুবিধাজনক তাপমাত্রা 22-35° C। পাতার প্যালিসেড প্যারেনকাইমা কোষে সালোক সংশ্লেষণ ঘটে। সালোকসংশ্লেষণের পর্যায় দুটি (ক) আলোক পর্যায় (খ) অন্ধকার পর্যায়। সালোকসংশ্লেষণের অন্ধকার পর্যায়ে বায়ুমণ্ডলের CO2 ব্যবহার করে শর্করা তৈরির চক্রকে ক্যালভিন ও ব্যাশাম চক্র বলে।
শ্বসনতন্ত্র (Respiratory System)
শ্বসন (Respiration)
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু (শর্করা) অক্সিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে জারিত হয়ে খাদ্যস্থ স্থিতি শক্তি গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত ও মুক্ত হয় এবং উপজাত হিসাবে পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় তাকে শ্বসন বলে।
উদ্ভিদের পুষ্টি (Plant Nutrition)
উদ্ভিদের দেহের স্বাস্থ্যপ্রদ বৃদ্ধি, শারীরিক পরিপূর্ণতা ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ পরিশোষণ প্রক্রিয়াকে পুষ্টি বলা হয়, অর্থাৎ উদ্ভিদের খনিজ পুষ্টি বলে। উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংখ্যা ১৬টি। উদ্ভিদের পুষ্টির উপাদান দুই ভাগে বিভক্ত।
ক) ম্যাক্রোমৌল বা মুখ্য পুষ্টি: উদ্ভিদের উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যে সকল উপাদান বেশি পরিমাণে দরকার হয় সেগুলোকে ম্যাক্রোমৌল বলা হয়। উদ্ভিদের মুখ্য পুষ্টি উপাদান ১০টি। যথা- নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেশিয়াম, কার্বন, হাইড্রেজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস ও সালফার।
মনে রাখার উপায়- Mg K CaFe for Nice CHOPS = এমজিকে কাফে ভাল চপের জন্যই ম্যাগনেশিয়াম (Mg), পটাশিয়াম (K), ক্যালশিয়াম, লৌহ (CaFe), নাইট্রোজেন (Nice), কার্বন হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস ও সালফার (CHOPS)।
খ) মাইক্রোমৌল বা গৌণ পুষ্টি উপাদান: উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদান অত্যন্ত সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় তাদেরকে মাইক্রো মৌল বলা হয়। উদ্ভিদের গৌণ পুষ্টি উপাদান ৬টি যথা- দস্তা (জিঙ্ক), ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম, বোরন, তামা এবং ক্লোরিন।
উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র কার্বন ও অক্সিজেন মাটি হতে গ্রহণ করে। অন্য উপাদান মাটি হতে মূলের সাহায্যে শোষণ করে।
বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের গুরুত্ব নিম্নরূপ-
১. নাইট্রোজেনের অভাবে উদ্ভিদের ক্লোরোফিল সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটে। ফলে পাতা হলুদ (পীতবর্ণ) হয়ে যায়। পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্লোরোসিস বলে।
২. ফসফরাসের অভাবে গাছের পাতা বেগুনি রং ধারণ করে এবং গাছের পাতা ও ফল ঝরে পড়ে।
৩. ম্যাগনেসিয়াম এবং লৌহের অভাবে গাছের পাতা ফ্যাকাশে রঙের হতে পারে।
৪. সালফারের অভাবে ফসলের পরিপক্কতা বিলম্বিত হয়।
৫. পটাশিয়ামের অভাব হলে পাতার শীর্ষ ও কিনারা হলুদ হয় এবং মৃত অঞ্চলের সষ্টি হয়।
৬. বোরনের অভাবে মূলের বৃদ্ধি কমে যায়, শাখার শীর্ষ মরে যায়, ফুলের কুড়ি জন্ম ব্যাহত হয়।
নাইট্রোজেন চক্র
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে নাইট্রোজেন। বাতাসের নাইট্রোজেন পানিতে মিশে মাটিতে শোষিত হওয়ার পরে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। নাইট্রেট (NO3) হিসাবে উদ্ভিদ সাধারণত মাটি থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। বজ্রবৃষ্টির ফলে মাটিতে উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান বৃদ্ধি পায় নাইট্রোজেন। কারণ- আকাশে বিদ্যুক্ষরণের সময় নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ উৎপন্ন করে।
N2 + O2 = 2NO, 2NO + O2 = 2NO2
নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ পানির সাথে মিশে নাইট্রিক এসিড উৎপন্ন করে।
4NO2 + 2H2O + O2 = 4HNO3
এ নাইট্রিক এসিড বৃষ্টির পানির সাথে মিশে মাটিতে পতিত হয় এবং জমির ক্ষারীয় উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রেট (NO3) লবণ উৎপন্ন করে।
2HNO3 + CaCO3 = Ca(NO3)2 + H2O + CO2
উদ্ভিদ এ নাইট্রেট গ্রহণ করে।
সবুজ বিপ্লব (Green Revolution)
বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশক থেকে ষাট এর দশকের শেষভাগ পর্যন্ত কৃষি বিষয়ক গবেষণা, উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। উচ্চফলনশীল জাতের বীজের ব্যবহার, কৃত্রিম সার ও কীটনাশক প্রয়োগ প্রভৃতি কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। কৃষির এই আমূল পরিবর্তন ‘সবুজ বিপ্লব’ নামে পরিচিত। বিখ্যাত মার্কিন কৃষি বিজ্ঞানী নরম্যান বোরলাউগকে সবুজ বিপ্লবের জনক বলা হয়।
উদ্ভিদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
উদ্ভিদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
(১) ধান, গম, যব, ছন, ইক্ষু, বাঁশ প্রভৃতি সবই ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্ভিদ বাঁশ। বাঁশ পৃথিবীর দ্রুততম বৃদ্ধিসম্পন্ন গাছ। নেপিয়ার এক ধরনের ঘাস।
(২) সরিষা, সয়াবিন, তিল, বাদাম, তিসি, সূর্যমুখী, নারিকেল ইত্যাদি তৈল উৎপাদনকারী উভদ। এ সকল উদ্ভিদ হতে যে তেল পাওয়া যায় তাকে উদ্ভিজ্জ তেল বলে।
(৩) অর্জুন, নিম, মুক্তাঝুড়ি, বাসক বেল, রসুন, ছাতিম, কালোমেঘ শতমূলী, নয়নতারা, থানকুনি, কালো ধুতরা, অশ্বগন্ধা, আদা ইত্যাদি উদ্ভিদকে ঔষধ তথা ভেষজ উৎপাদনকারী উদ্ভিদ বলে।
(৪) তুলা, পাট, মেস্তাপাট, বেত ইত্যাদি উদ্ভিদকে তন্তু উৎপাদকারী উদ্ভিদ বলা হয়। বস্ত্র শিল্পের প্রধান উপাদান তুলা। তুলা গাছকে ‘সূর্যের কন্যা’ বলা হয়।
আরও দেখুন...